খেললেন, খেলালেন, গোল করলেন। শেষ বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে মাঠে উজার করে দিলেন মেসি
তিনি ফুটবলের রাজকুমার নন, রাজাও নন। তিনি ফুটবলের শিল্পী। পায়ের বলটাকে তুলি ভেবে সবুজ গালিচা তে আপন মনে ছবি আঁকেন। সেই শিল্পী কাতার ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচের শুরুতেই পেনাল্টিতে গোল দিয়ে কোনঠাসা করে দিলেন বিপক্ষকে। আর্জেন্টিনা ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে পরাজিত করায় পৌঁছে গেলো বিশ্বকাপের ফাইনালে।এই লাতিন আমেরিকান ফুটবলের দেশটি শেষ তিনটি বিশ্বকাপের মধ্যে দুবার ফাইনালে উঠলো। এটি নিয়ে তাঁরা মোট ছয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রতিদ্বন্দিতা করবে। আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ তে চাম্পিয়ান এবং ১৯৩০, ১৯৯০ এবং ২০১৪ সালে রানার-আপ হয়।লুসাইল স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যচের শুরু থেকেই বিদ্যুৎ গতিতে আক্রমণ শানিয়ে গেছে আর্জেন্টিনা। তাঁদের আক্রমণের ঝাঁজে বেসামাল হয়ে পরে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগ। ২২ বছর বয়সী জুলিয়ান আলভারেজ দুটি গোল করেন এবং ৩৪ মিনিটে লিওনেল মেসি পেনাল্টি থেকে প্রথম গোলটি করেন।পেনাল্টি থেকে গোল করার সাথে সাথে লিওনেল মেসির বিশ্বকাপে গোলসংখ্যা বেড়ে হয় ১১, যারফলে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে পেছনে ফেলে একজন আর্জেন্টিয়ান হিসাবে তালিকায় একেবারে প্রথম স্থানে নিয়ে যায়। এই ম্যাচটি মেসির ২৬তম বিশ্বকাপ ম্যাচ, তিনি জার্মান কিংবদন্তি লোথার ম্যাথাউসের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডে ছুঁয়ে ফেলেন।আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা উদ্বেগে রেখেছিলো মেসির বাম হ্যামস্ট্রিং-এ চোট, খেলার বিভিন্ন সময়ে ছোট খাটো আঘাত লাগলেও সেরকম কিছু অঘটন ঘটেনি। চোট আঘাতে জর্জরিত হওয়া সত্ত্বেও তার খেলায় এর কোনও প্রভাব বুঝতে দেননি বিশ্ব ফুটবলের এই শিল্পী। খেলার প্রথম আধঘণ্টা সমানে সমানে টক্কর দেয় ক্রোয়েশিয়া। বেশ কয়েকটি গোলের সুজোগ-ও তাঁরা করে ফেলে। শেষ ১৫ মিনিটে খেলার ছবিটাই বদলে দেয় আর্জেন্টিনা। মুহুর্মুহু আক্রমণে নাজেহাল করে তোলে ক্রয়েশিয়াকে। বিশ্বকাপ ছবার সেমিফাইনাল খেলে ছবারই জয়লাভ করে তাঁরা।এখনও পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে যতগুলো ম্যাচ খেলেছেন এল এন-১০ সব প্রতিপক্ষ-ই তাঁকে জোনাল মার্কিংয়ে রেখেছিল, বাদ যাইনি ক্রোয়েশিয়াও। মেসি পায়ে বল এলেই পায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পরছিল তিন থেকে চার জন ফুটবলার। এসব করেও মেসিকে বেশিক্ষণ বন্দি রাখতে পারলেন না ক্রোট রা। বার বার বামদিক ডানদিক করে দিশেহারা করে দিলেন প্রতিপক্ষকে। ম্যচ যত এগোল মেসি সারা মাঠে তার বাম পা টিকে তুলির মত ব্যবহার করে রংবাহারি করে দিলেন সবুজ গালিচা। তিনি রক্ষণ ভাগ চিরে পাস দিয়ে একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করলেন। সতীর্থকে দিয়ে গোল করলেন। নিজে গোল করালেন। শেষ বাঁশি না বাজা অবধি নিজেকে নিঁগড়ে দিলেন। তাঁর শেষ বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যেনো সব কিছু বাজি রাখতে তৈরি তিনি।